 --আমাদের নবী মুহম্মদ (সা) যখন ১৪০০ বছর আগে মুশরিক আরবদেরকে কু’রআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন, তখন তা শুনে আরবদের দুই ধরণের প্রতিক্রিয়া হতঃ কি অসাধারণ কথা! এভাবে তো আমরা কখনও আরবি ব্যবহার করার কথা ভেবে দেখিনি! এত অসাধারণ বাক্য গঠন, শব্দ নির্বাচন তো আমাদের সবচেয়ে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকেরাও করতে পারে না! এমন কঠিন বাণী, এমন হৃদয় স্পর্শী করে কেউতো কোন দিন বলতে পারেনি! এই জিনিস তো মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়! এটা নিশ্চয়ই আল্লাহর বাণী! আমি সাক্ষি দিচ্ছি , লা ইলাহা
ইল্লালাহ… অথবা, --সর্বনাশ, এটা নিশ্চয়ই যাদু! এই জিনিস মানুষের পক্ষে বানানো সম্ভব না। এটা তো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি কোন দৈব বাণী। কিন্তু এই জিনিস আমি মেনে নিলে তো আমি আর মদ খেতে পারবো না, জুয়া খেলতে পারবো না, আমার দাসগুলোর সাথে যা খুশি তাই করতে পারবো না। আমাকে তো সত্যি কথা বলা শুরু করতে হবে, সুদ খাওয়া বন্ধ করতে হবে, যাকাত দিতে হবে, আমার দাসগুলোর সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। এরকম করলে তো আমার পরিবার এবং গোত্রের লোকেরা আমাকে বের করে দেবে। আমার মান-সন্মান, সম্পত্তি সব পানিতে চলে যাবে। এই জিনিস যেভাবেই হোক আটকাতে হবে। দাঁড়াও, আজকেই আমি আমার দলবল নিয়ে এই লোকটাকে…
কু’রআনের বাংলা বা ইংরেজি অনুবাদ পড়ে কখনও কি আপনার এরকম কোন প্রতিক্রিয়া হয়েছে? কু’রআন তিলাওয়াত শোনার পর হয় মানুষ এর সত্যতা উপলব্ধি করে সত্য ধর্ম খুঁজে পাবার উপলব্ধি থেকে সাথে সাথে মুসলমান হয়ে যেত, অথবা তারা এর সত্যতা উপলব্ধি করে বুঝত যে তাদের জীবন পুরোপুরি পাল্টে ফেলতে হবে এবং সেটা তারা কোনভাবেই করবে না, সুতরাং যেভাবেই হোক কু’রআনের প্রচারকে বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু কু’রআনের অনুবাদ পড়ে কি আমাদের কখনও মনে হয় যে এই জিনিস কোন মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব নয়, বা এত সূক্ষ্ম শব্দ নির্বাচন, বাক্য গঠন কোন মানুষ কখনও করতে পারবে না? আমাদের সাধারণত তা মনে হয় না। এর কারণ হল অনুবাদগুলোতে কু’রআনের আরবি শব্দগুলোর শব্দের গভীরতা, কু’রআনের অসাধারণ বাক্য গঠনশৈলী, একটি আয়াত যে একসাথে কতগুলো বাণী ধারণ করে, কেন আল্লাহ বিভিন্ন সমার্থক শব্দের মধ্য থেকে কোন একটি বিশেষ শব্দকে একটি বিশেষ আয়াতে বেছে নিলেন – অনুবাদগুলোতে এগুলো তুলে ধরা হয় না। যার কারণে আমরা কু’রআনের অনুবাদ পড়ে কু’রআনের বাণীর গভীরতা, ব্যাপকতা এবং কু’রআনের অলৌকিকতা অনুধাবন করতে পারি না। আমরা মোটামুটি বুঝতে পারি কু’রআনে আল্লাহ আমাদেরকে কী বলতে চেয়েছেন, কিন্তু স্বয়ং আল্লাহর ভাষণের যে হৃদয় কাঁপানো গাম্ভীর্য, যে গভীর আবেগ, যে অলৌকিকতা, তা আমরা কখনই অনুধাবন করতে পারি না। http://hridoye-islam.com/2012/12/03/an-indepth-study-of-surah-fatihah/
|