"[দয়া করে পড়বেন]
এই পোষ্টটি আমাদের মুসলিম বোনদের জন্য "পর্দা সম্পর্কে"। পর্দা সম্পর্কে অনেক সময় আমাদের সামনে সূরা আহযাবের ৫৯নং আয়াতটি পেশ করা হয়। কিন্তু আমরা এর ব্যাখ্যাটা অনেকে জানিনা। ... মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলছেনঃ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا(59 হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। ***সুরা আহযাবঃ আয়াত-৫৯। এই আয়াতে ‘‘তাদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়ার’’ - অর্থ হলোঃ চাঁদর দিয়ে যেন নিজেদের শরিরের উপর থেকে ঢেকে নেয় এবং মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ অনাবৃত রেখে যেন বের না হয়। অনুরূপ ‘‘এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে’’ এর অর্থ হলো-তাদেরকে এই সরল ও শালীন পোষাক পরিহিতা দেখে প্রত্যেকে এ কথা সহজে বুঝে নেবে যে, তারা সম্ভ্রমশালী মেয়ে/মহিলা, তারা উচ্ছৃংখল ও চরিত্রহীনা স্ত্রীলোক(বিবাহিত/ অবিবাহিত) নয়। তাই যে কোন দূরাচার/পাপাচার নিজের অন্তরের বাসনা তাদের দ্বারা পূর্ণ করার আশা করবে না। তদ্রূপ ‘‘ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না’’ এর মর্মার্থ হলো- তারা সম্ব্রান্ত ও বিশেষ মূল্যবোধের অধিকারীনি বলে পরিচিত হওয়ায় অশালীন আমন্ত্রণের লক্ষ্য হবেনা। আর যারা পর্দা করেনা তারা কি জানে যেঃلِّلَّهِ ما فِي السَّمَاواتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَإِن تُبْدُواْ مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللّهُ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاء وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاء وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ(284 যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। ***সূরা বাকারাহঃ আয়াত-২৮৪। তিনি সেই পরাক্রমশালী স্বত্ত্বা যিনি নিজেই ঘোষণা করেছেনঃ يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا(85 সেদিন দয়াময়ের কাছে পরহেযগারদেরকে অতিথিরূপে সমবেত করব। *** সুরা মারইয়ামঃ আয়াত-৮৫। وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا(86 এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। *** সুরা মারইয়ামঃ আয়াত-৮৬। এই আয়াতদ্বয়ে বলা হয়েছেঃ তিনি হলেন সেই ভয়াবহ পরিণাম দিনের একমাত্র অধিকর্তা। তিনি আবার ঘোষণা করেছেন, يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَىٰ وَمَا هُم بِسُكَارَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন। ***সূরা হাজ্জ্বঃ আয়াত-০২। তিনি সেই সুমহান পবিত্র স্বত্ত্বা যিনি ঘোষণা করেছেনঃ يَوْمَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُولُ هَلْ مِن مَّزِيدٍ(30 যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব; তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবেঃ আরও আছে কি? ***সূরা ক্বাফঃ ৩০। وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ(31 জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে খোদাভীরুদের অদূরে। *** সূরা ক্বাফঃ-৩১। মুসলিম বোন তোমরা কি কখনো আল্লাহর সেই পবিত্র ঘোষণা শুনেছ বা পাঠ করেছ? আল্লাহ বলেছেনঃ قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ(30 মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ***সুরা নুরঃ আয়াত-৩০। وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ(31 ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ***সুরা নুরঃ আয়াত-৩১। এবার ইমাম বুখারী(রহঃ)-এর সংগৃহিত এবং আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেনঃ আল্লাহ তায়ালা প্রথমে মুহাজির মহিলাদের প্রতি রহম করবেন, কেননা তারা যখনই আল্লাহর এই ঘোষণা, ‘‘আর অবশ্যই তারা তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশের উপর নিজেদের চাঁদর বা ওড়না(মাথার কাপড়) ফেলে রাখবে’’ শুনতে পেয়ে তখনই নির্দ্বিধায় এর উপর আমল শুরু করে দিয়েছে এবং যে জন্যে নিজেদের ওড়নাকে করেছে অনেক লম্বা ও প্রশস্ত। বোনেরা, এখন হয়তো তোমরা বলবে আমরা তাদের থেকে তো অনেক দুরে আছি তাইনা? যদি সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও সংকল্পের সাথে তোমরা উক্ত কাজে অবতীর্ণ হও, তাহলে আমাদের সমাজও পরিণত হবে তাদের সমাজের মত ফিৎনা ও ফ্যাসাদহীন সুখী সমাজে। আর এটা আশ্চর্যের কোন বিষয় নয় বরং কবি এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে বলেছেনঃ ভালো লোকের মতো না হতে পারলেও হতাশ হইও না বরং তাদের সদৃশ হওয়ার চেষ্টা কর। কেননা ভালো হওয়ার চেষ্টাটাই কল্যাণের দরজা খুলে দেয়।
পরিশেষে, আমার মুসলিম বোনদেরকে অনুরোধ করছি, আপনারা কুরআন-হাদিসের আলোকে পর্দা করে চলুন; আল্লাহ আপনাদের মর্যাদা'কে আরও বাড়িয়ে দিবেন। আল্লাহ হাফেজ। ফি আমানিল্লাহ।See More
|