Calendar |
---|
« April 2024 » | Su | Mo | Tu | We | Th | Fr | Sa | | 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 |
|
Statistics |
---|
Total online: 1 Guests: 1 Users: 0 |
|
বিদআত হল, ধর্মের নামে ধর্মের মধ্যে নতুন আবিস্কৃত বিষয়।
-
বিদআত হল, ধর্মের নামে ধর্মের মধ্যে নতুন আবিস্কৃত বিষয়। যা আল্লাহ বলেননি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ দ্বারা যা প্রমাণিত নয়, সাহাবায়ে কেরামের কেউ যা করেননি তা দীনি বা সওয়াবের কাজ বলে আমল করার নাম হল বিদআত। বিদআ... ত যেমন কর্মে হয় তেমনি আকীদা- বিশ্বাসেও হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন - অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? (সূরা ইউনুস আয়াত : ৩২) অর্থাৎ, ইসলাম পূর্ণতা লাভ করার পর ইসলামের নামে দীনের মধ্যে যা কিছু সংযোজিত, আবিস্কৃত ও প্রচলিত হবে সব কিছুই ভ্রান্ত বলে প্রত্যাখ্যাত হবে। আর তা বিদআত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন - আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ রাখিনি। (সূরা আনআম, আয়াত : ৩৮) অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সব কিছু যখন বলে দিয়েছেন তখন ধর্মে নতুন কোন বিষয় সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজন নেই। যে কোন ধরনের সংযোজন ও বিয়োজনই বিদআত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন - অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও। (সূরা নিসা, আয়াত : ৫৯) অর্থাৎ, যখন কোন বিষয়ে মত বিরোধ সৃষ্টি হবে তখন তার সমাধান আল্লাহ তাআলার কিতাব কুরআনুল কারীম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসে খুঁজতে হবে। আল্লাহর বিধানে সমাধান না খুঁজে নিজেদের পক্ষ থেকে যুক্তি দিয়ে কোন বিষয় সংযোজন ও বিয়োজন করা যাবে না। কুরআন-সুন্নাহর মূল ধারার বাইরে কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন - আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। (সূরা আনআম, আয়াত : ১৫৩) অর্থাৎ, সত্য, সঠিক ও সরল পথ একটিই। আর তা হল ইসলাম। ইসলাম বাদে আছে আরও অনেক পথ। কিন্তু সেগুলো সত্য, সঠিক ও সরল নয়। সেগুলো বিদআত। আল্লাহ তাআলা বলেন - বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১) অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের দাবী হল, সকল প্রকার বিদআত পরিহার করা ও তাকে অনুসরণ করা। বিদআত থেকে দূরে থাকা। কারণ, তিনি বিদআতে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন যা আমরা পরবর্তীতে কিছু হাদিসে দেখব ইনশাআল্লাহ । আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ বিষয়ে (ধর্মীয় বিষয়ে) এমন কিছু সৃষ্টি করবে যা এর থেকে (প্রমাণিত) নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও মুসলিম) মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে : যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত। অর্থাৎ, বিদআত ইসলামে নিষিদ্ধ। ইহুদী ও খৃষ্টধর্মসহ অন্যান্য আসমানী ধর্মগুলো বিদআতের কারণেই নি:শেষ হয়ে গেছে। ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করার কারণে এ সব ধর্মের মূল কাঠামো আর অবশিষ্ট থাকেনি। আলোচ্য হাদীসে ‘আমাদের এ বিষয়ের মধ্যে’ বাক্য দ্বারা ইসলামের ধর্মীয় বিষয় বুঝানো হয়েছে। ইসলামের ধর্মীয় আচার-আচরণে কোন নতুন বিষয় সংযোজন, প্রচলন, আবিস্কার করা যাবে না। অতএব জাগতিক ও পার্থিব বিষয়ে নতুন আবিস্কার, উদ্ভাবন বা নতুন কিছুর প্রচলন নিষিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত নয়। সুতরাং, ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করা, আবিস্কার করা যেমন অন্যায়, তেমনি এর অনুসরণ করে তা পালন করাও অন্যায়। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবা দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত। কন্ঠস্বর উচ্চ হয়ে যেত। রাগত ভাব প্রচন্ডভাবে প্রকাশ পেত। মনে হত তিনি কোন সৈন্যবাহিনীকে সতর্ক করছেন যে, সকালে বা বিকালেই শত্রু বাহিনী এসে পড়বে। তিনি আরো বলতেন, আমি আর কেয়ামত এমন নিকটবর্তী, এ কথা বলে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দুটো একত্র করতেন। তিনি আরো বলেনঃ জেনে রাখ! সবচেয়ে ভাল কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর ধর্মের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে ধর্মে নতুন সৃষ্টি। (এটা বিদআত) আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা।... (মুসলিম) এ হাদিস থেকে আমরা সর্বোত্তম কথা ও সর্বোত্তম আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারলাম। একইভাবে সবচেয়ে খারাপ বিষয় সম্পর্কেও জানতে পারলাম। আর তা হল বিদআত। কারণ, সকল বিদআতই মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। যেমন খৃষ্ট ধর্মে বিদআত খৃষ্টানদেরকে পথভ্রষ্ট করে পৌত্তলিকতায় লিপ্ত করেছে। আমরা আরও জানতে পারলাম, জুমার খুতবায় লোকদেরকে বিদআত সম্পর্কে সতর্ক করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাত। আবু নাজীহ ইরবাজ ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক বাগ্মীতাপূর্ণ ভাষায় ওয়াজ করলেন, তাতে আমাদের হৃদয় সন্ত্রস্ত হয়ে গেল আর চোখ থেকে অশ্রুপ্রবাহিত হতে লাগল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা যেন আপনার বিদায়ী উপদেশ। আপনি আমাদের আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহর ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বনের জন্য তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। আরো উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা তোমাদের নেতার অনুসরণ ও আনুগত্য করবে। যদি হাবশী গোলাম তোমাদের আমীর নির্বাচিত হয়, তবুও। আর তোমাদের মধ্যে যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার সুন্নাত আঁকড়ে ধরা ও সৎপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসরণ করা। এ সুন্নাত ও আদর্শকে খুব মজবুতভাবে ধারণ করবে। আর (ধর্মের মধ্যে) সকল প্রকার নবসৃষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকবে। জেনে রাখো, প্রত্যেকটি বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, তিরমিজি) অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের বিপরীত যা কিছু ধর্ম হিসাবে চালু হবে তার নাম বিদআত। বিদআত হল সুন্নাহর বিপরীত। বিদআত ইসলামে একটি মারাত্মক অপরাধ।এ হাদীসে বিদআত থেকে দূরে থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, ‘ধর্মের জন্য নতুন বিষয়ের প্রচলন’ আর ‘ধর্মের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন’ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটি বিদআত নয়। দ্বিতীয়টি বিদআত। প্রথমটি উদাহরণ হিসাবে আজকের যুগের মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আজান ও নামাজে মাইক ব্যবহার, ইসলামের দাওয়াতে টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির ব্যবহার পেশ করা যেতে পারে। এগুলো সব ধর্মের জন্য প্রচলন করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রকারের উদাহরণ হিসাবে মীলাদুন্নবী উদযাপন, শবে বরাত পালন, ওরস অনুষ্ঠান ইত্যাদি পেশ করা যেতে পারে। এগুলো হল ধর্মের মধ্যে নতুন আবিস্কার। বিদ'আতের কুফলঃ (১) বিদআত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে - নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হল হক। এ ছাড়া যা কিছু ধর্মীয় আচার হিসাবে পালিত হবে তা পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন - হক আসার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কি থাকে ? (সূরা ইউনুস: ৩২) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - সকল ধরনের বিদআত পথভ্রষ্টতা। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ) (২)সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায় - বিদআত অনুযায়ী কেউ আমল করলে অবশ্যই সে এক বা একাধিক সুন্নাত পরিত্যাগ করে। উলামায়ে কিরাম বলেছেন :- "যখন কোন দল সমাজে একটা বিদআতের প্রচলন করে, তখন সমাজ থেকে কম করে হলেও একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়।” যেমনঃ রমজানের শেষ দশ দিনের রাতসমূহে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু ১৫ শাবানে রাত জাগাকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়, তেমনিভাবে এ সুন্নাতী আমলের প্রচলন দেখা যায় না। বরং শবে কদরের মূল্যায়ন দিয়ে দেয়া হচ্ছে শবে বরাতকে। ফরয সালাত আদায়ের পর সর্বদা নিয়মিতভাবে জামাতবদ্ধ হয়ে মুনাজাত করা একটি বিদআত। এটা আমল করার কারণে ফরয সালাত আদায়ের পর যে সকল যিক্র-আযকার সুন্নাত হিসাবে বর্ণিত আছে তা পরিত্যাগ করা হয়। (৩) বিদআত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে- এর জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের খৃষ্টান ধর্ম। তারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করতে করতে তার মূল কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট হিসাবে অভিহিত হয়েছে। তাদের বিদআত প্রচলনের কথা আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে - আর সন্ন্যাসবাদ! এটাতো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রচলন করেছিল। আমি তাদের এ বিধান দেইনি। (সূরা হাদীদ: ২৭) সন্ন্যাসবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের বিদআত খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে প্রবর্তন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল; উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত যে কোন কাজ করলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে যারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভাল থাকে। কিন্তু তাতে নাজাত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে অন্য জাতির রসম-রেওয়াজ ও বিদআত প্রচলন করে ধর্মকে এমন বিকৃত করেছে যে, তাদের নবীগণ যদি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাহলে তাদের রেখে যাওয়া ধর্ম তাঁরা নিজেরাই চিনতে পারবেন না। এমনিভাবে আমাদের মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায় বিদআতের প্রচলন করে দ্বীন ইসলামকে কিভাবে বিকৃত করেছে তা নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। (৪) বিদআত ইসলামের উপর একটি আঘাত : যে ইসলামে কোন বিদআতের প্রচলন করল সে মূলতঃ অজ্ঞ লোকদের মত এ কথা স্বীকার করে নিল যে, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান নয়, তাতে সংযোজনের প্রয়োজন আছে। যদিও সে মুখে এ ধরনের বক্তব্য দেয় না, কিন্তু তার কাজ এ কথার স্বাক্ষী দেয়। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৩) (৫)রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে খিয়ানাতের অভিযোগ: যে ব্যক্তি কোন বিদআতের প্রচলন করল বা আমল করল আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন ‘এ কথা বা কাজটি যে ইসলাম ধর্মে পছন্দের বিষয় এটা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন?’ তিনি উত্তরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলবেন। যদি ‘না’ বলেন, তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, ইসলাম সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম জানতেন। আর যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি জানতেন, কিন্তু উম্মাতের মধ্যে প্রচার করেননি। এ অবস্থায় তিনি তাবলীগে শিথিলতা করেছেন। খিয়ানত করেছেন আমানতের ব্যাপারে। (নাউযুবিল্লাহ!) (৬) বিদআত মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে বিদআত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ-বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তাদের মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, একদল লোক মীলাদুন্নবী পালন করল। আরেক দল বিদআত হওয়ায় তা বর্জন ও বিরোধিতা করল। যারা এটা পালন করল তারা প্রচার করতে লাগল যে, অমুক দল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে আনন্দিত হওয়া পছন্দ করে না। তাঁর গুণ-গান করা তাদের কাছে ভাল লাগে না। তাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই। যাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই তারা বেঈমান। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুশমন। আর এ ধরনের প্রচারনায় তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের দুশমনে পরিণত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ল। এভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই বিদআতকে গ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ শিয়া ও সুন্নী এবং পরবর্তী কালে আরো শত দলে বিভক্ত হয়ে গেল। কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, রক্তপাত হল। তাই মুসলিম উম্মাহকে আবার একত্র করতে হলে সকলকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে আহ্বান ও বিদআত বর্জনের জন্য অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় পরম ধৈর্যের সাথে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে সকল মানুষ ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রদর্শন করে। কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন আচরণ করা যাবে না। এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যা হক ও সত্য তা-ই শুধু টিকে থাকবে। আর যা বাতিল তা দেরীতে হলেও বিলুপ্ত হবে। (৭) বিদআত ‘আমলকারীর তাওবা করার সুযোগ হয় নাঃ বিদআত যিনি প্রচলন করেন বা সেই অনুযায়ী আমল করেন তিনি এটাকে এক মহৎ কাজ বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন এ কাজে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। যেমন আল্লাহ খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেছেন তারা ধর্মে বৈরাগ্যবাদের বিদআত চালু করেছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। যেহেতু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তি বিদআতকে পাপের কাজ মনে করেন না, তাই তিনি এ কাজ থেকে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করেন না এবং তাওবা করার সুযোগও হয় না। অন্যান্য পাপের বেলায় কমপক্ষে যিনি পাপে লিপ্ত হন তিনি এটাকে অন্যায় মনে করেই করেন। পরবর্তীতে তার অনুশোচনা আসে, এক সময় তাওবা করে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভ করেন। কিন্তু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তির এ অবস্থা কখনো হয় না। (৮) শাফাআত হতে বঞ্চিত - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - শুনে রাখ! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রেখ! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব – হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। (কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে ?) তিনি উত্তর দেবেন, আপনি জানেন না, আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে। (ইবনে মাজাহ) অন্য এক বর্ণনায় আছে এর পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাদের উদ্দেশে বলবেন – দূর হও! দূর হও!! (৯) বিদআত মুসলিম সমাজে কুরআন ও হাদীসের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়- (১০) বিদআত প্রচলনকারী অহংকারের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে ও নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে দ্বীনকে ব্যবহার ও বিকৃত করতে চেষ্টা করে তাই প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সব কাজে সকল ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র অবলম্বন হতে হবে আল কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ। তাতেই মুক্তি এবং তাতেই প্রশান্তি। তাই সর্বতোভাবে বিদআত থেকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিত্যাগ করতে হবে কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী সকল আচার-প্রচলন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন।
-
বিদ’আতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে "নযীরহীনভাবে কিছু নব আবিস্কার করা ।” যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : "তিনি (নযীরবিহীন) আসমান ও যমীনের স্রষ্টা” সূরা বাকারাহ /১১৭
পারিভাষিক অর্থে বিদ’আত বলা হয় : "ধর্মের মধ্যে যে নবাবিস্কৃত ইবাদাত , বিশ্বাস ও কথার স... মর্থনে কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে কোন দলীল মিলে না অথচ তা ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় তাকেই বিদ’আত বলা হয় ।”
ব্যক্তি , সমাজ , ধর্মীয় মাসআলা মাসায়েলের উপর বিদ’আতের কুপ্রভাব অত্যন্ত ভয়ানক । তবে বিদ’আতের স্তর রয়েছে । স্তরভেদে বিদ’আতের ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো প্রযোজ্য । একটি কথা মনে রাখতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে বিদ’আতকে যত ছোটই ভাবা হোক , তা রাসূল (সাঃ) এর এ (শরী’আতের মাঝে প্রত্যেক নবাবিস্কারই বিদ’আত আর প্রত্যেক বিদ’আত ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম) বাণীর আওতা হতে কোন অবস্থাতেই বের হবে না । অতএব বিদ’আতের ভয়ানক ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো আমাদের জানা দরকার । এ করণেই নিম্নে সংক্ষেপে সেগুলো উল্লেখ করা হলঃ
আল্লামাহ শাতেবী (রহঃ) সহ অন্যান্য ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বিদ’আতের যে সব কুপ্রভাব উল্লেখ করেছেন সেগুলো নিম্নরুপঃ
১. বিদ’আতীর কোন আমল কবুল করা হবে না : রাসূল (সাঃ) বলেছেন : "যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে বা কোন নবাবিষ্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ……. তার ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ , নফল ইবাদাত বা ফিদইয়া কবুল করা হবে না ….।” বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হা/৩১৮০ ।
ইমাম আওযা’ঈ বলেন কোন কোন বিশেষজ্ঞ আলেম বলেছেন : বিদ’আতীর সালাত , সিয়াম , সাদাকাহ , জিহাদ , হাজ্জ , উমরাহ , কোন ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ , নফল ইবাদাত বা ফিদইয়া গ্রহণযোগ্য হবে না । অনুরুপ কথা হিশাম ইবনু হাস্সানও বলেছেন ।
আইউব আস-সুখতিয়ানী বলেন : বিদ’আতী তার প্রচেষ্টা যতই বৃদ্ধি করবে আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব ততই বৃদ্ধি পাবে ।
এছাড়া যে বিদ’আতকে পছন্দ করে তার ধারনা শরীয়ত পূর্ণ নয় , অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : "আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি” সূরা মায়েদা/২ ) কারণ তার নিকট যদি দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে যেয়েই থাকে তাহলে সে শরীয়তের মধ্যে নতুন কিছুর প্রবেশ ঢুকাবে কেন বা তাকে অবহিত করার পরেও কেনই বা বিদ’আতের উপর আমল করবে ।
২. বিদ’আত পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত বিদ’আতীর কোন প্রকার তওবাহ করার সুযোগ জুটবে না : "আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিদ’আতির বিদ’আতকে পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তওবার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন” – সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/১৩০পৃ হাদীস নং ৫৪ ।
৩. বিদ’আতী নবী (সাঃ) এর হাওযে কাওসারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে : আবু হাসেম হতে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন , "আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে , আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন : তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত । তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো : দূর হয়ে যা , দূর হয়ে যা” সহীহ মুসলিম হা/৪২৪৩ ।
৪. বিদ’আতী অভিশপ্ত : কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন : "যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কার করবে বা কোন নবাবিস্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ ।” বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হা/৩১৮০ ।
৫. বিদ’আতীর নিকট যাওয়া ও তাকে সম্মান করা ইসলামকে ধ্বংস করার শামিল : পূর্বোল্লিখিত হাদীসটিই এ দলীল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে । ( যদিও আল্লামাহ শাতেবী (রহঃ) একটি দূর্বল হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন ।) কারণ বিদআতীকে আশ্রয় দিলেই তাকে সম্মান করা হয় । আর যখন এ কারণে ইবাদাতগুলো কবুল করা হয় না , তখন আশ্রয়দানকারী তার ইসলামকে যে ধ্বংস করে দিল তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
বিশিষ্ট তাবে’ঈ হাসসান ইবনু আতিয়াহ (রহঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন : "কোন সম্প্রদায় যখন তাদের দ্বীনের মধ্যে কোন বিদ’আত চালু করে তখন আল্লাহ তা’য়ালা তাদের থেকে অনুরুপ একটি সুন্নাতকে উঠিয়ে নেন । অতঃপর কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের নিকট সুন্নাতটি আর ফিরিয়ে দেন না” । -মুকাদ্দিমা দারেমী ।
আরো এসেছে যে , "কোন ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন প্রকার বিদ’আত চালু করলেই সে তার চেয়ে উত্তম সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে” । - আল ইতিসাম ১/১৫৩ ।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : "প্রত্যেক বছরই লোকেরা একটি করে বিদ’আত চালু করবে আর একটি করে সুন্নাতকে মেরে ফেলবে । শেষ পর্যন্ত বিদ’আত জীবিত হবে আর সুন্নাতগুলো মারা যাবে” । -আল ইতিসাম ১/১৫৩ ।
৬. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট হতে বিদ’আতীর দূরত্ব বাড়তেই থাকবে : হাসান বছরী হতে বর্ণিত , তিনি বলেন : বিদ’আতী সালাত , সিয়াম ও ইবাদাতে যতই তার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করবে ততই আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে ।
আইউব আস-সুখতিয়ানী বলেন : বিদ’আতী তার প্রচেষ্টা যতই বৃদ্ধি করবে আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব ততই বৃদ্ধি পাবে ।
রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসেও এ অর্থের ইঙ্গিত বহন করছে । তিনি খারেজিদের সম্পর্কে বলেছেন : "…… তারা দ্বীনের মধ্য হতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে তীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায় ।” (বুখারী , মুসলিম) ।
এ বেরিয়ে যাওয়া তাদের বিদ’আতের কারণেই । এ হাদীসের মধ্যেই বলা হয়েছে "অথচ তাদের সালাত ও সিয়ামের তুলনায় তোমাদের সালাত ও সিয়ামগুলোকে তোমরা তুচ্ছ মনে করবে” ।
৭. বিদ’আত ইসলামী লোকদের মাঝে দুশমনী , ঘৃণা , বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করে : কারণ বিদ’আত লোকদেরকে বিভক্তির দিকে আহবান করে , কুরআন তারই প্রমাণ দিচ্ছে । আর এ থেকেই দুশমনী ও ঘৃণার সৃষ্টি হয় । আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : "তোমরা সেই সব লোকদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরেও মতভেদ করেছে , তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব” – সূরা আলে-ইমরান : ১০৫ ।
তিনি আরও বলেন : "নিশ্চয় এটিই আমার সোজা সরল পথ তোমরা তারই অনুসরণ কর , তোমরা বহু পথের অনুসরণ করো না , কারণ তা তোমাদেরকে তাঁর এক পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে” – সূরা আন’আম : ১৫৩ ।
তিনি আরও বলেন : "নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং তারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে আপনি তাদের কোন কিছুতেই অংশীদার নন” – সূরা আন’আম : ১৫৯ ।
হাসান বছরী (রহঃ) বলেন : তুমি বিদ’আতীর নিকট বসবে না , কারণ সে তোমার হৃদয়কে রোগাক্রান্ত করে দিবে ।
অতএব দ্বীন পরিপূর্ণরুপে ও সুস্পষ্টভাবে আসার পরেও যদি কোন ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট না হতে পেরে নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটায় , তা ইসলামের মধ্যে বিভক্তির কারণ এতে কোন সন্দেহ নেই । আর এ বিভক্তিই পরস্পরের মাঝে দুশমনী সৃষ্টি করে । যার জলন্ত প্রমাণ আমরা সমাজের মাঝে দিবালোকের ন্যায় প্রত্যক্ষ করছি । অতএব বাস্তবতাও তার বিরাট একটি দলীল ।
৮. বিদ’আত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শাফা’আত প্রাপ্তি হতে বাধা প্রদান করবে : কারণ হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে যে , বিদ’আতীকে হাওযে কাওছারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত করা হবে । তিনি তাদের দূর হয়ে যেতে বলবেন । এটি প্রমাণ করছে যে তারা তাঁর শাফা’আত হতেও বঞ্চিত হবে ।
এখানে শাতেবী (রহঃ) একটি দূর্বল হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণ করে , সেটির অর্থকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন । সেটি হচ্ছে ‘বিদ’আতী ছাড়া আমার উম্মাতের সবাই আমার শাফা’আত পাবে’ (আল-ইতিসাম ১/১৫৯) ।
৯. বিদ’আত সহীহ সুন্নাহকে বিতাড়িত করে তার স্থলাভিষিক্ত হয় : বাস্তব নমুনায় এর বিরাট প্রমাণ । সালাত শেষে জামা’বদ্ধ হয়ে হাত তুলে দো’আ করলে , সালাতের পরে পঠিতব্য মুতাওয়াতির সূত্রের সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দো’আ ও যিকিরগুলো পড়া হয় না । এছাড়া ইসলামের বিভিন্ন ইবাদাতের মধ্যে দূর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এরুপ বহু আমল আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যা সরাসরি সহীহ হাদীসর বিপরীত আমল । বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দে নিকট এর চেয়ে আর বেশী কিছু বলা প্রয়োজন মনে করছি না । অতএব দূর্বল বা জাল হাদীসের উপর আমল করলে সহীহ সুন্নাহ বিতাড়িত হবেই । সালাফদের ভাষ্য উল্লেখ করে পূর্বে (৫) এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।
১০. বিদ’আত সৃষ্টিকারী তার নিজের ও তার অনুসরণকারী বিদ’আতের সাথে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সমপরিমাণ গুনাহের অংশীদার হবে : রাসূল (সাঃ) বলেছেন : "যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে সে তার গুণাহ ও তার অনুসাররি গুণাগ বহন করবে । অনুসরণকারীদের গুণাহ সমূহে সামান্য পরিমাণ ঘাটতি না করেই” (বুখারী ও মুসলিম)
কোন সন্দেহ নেই বিদ’আতের দিকে আহবান করা বা তার উপর আমল করা পথভ্রষ্টতারই একটি অংশ । কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন : ‘সব বিদ’আতই ভ্রষ্টতা’ ।
১১. বিদ’আতীর অমঙ্গলজনক শেষ পরিণতির ভয় রয়েছে : কারণ বিদ’আতী গুণাহের সাথে জড়িত , আল্লাহর অবাধ্য । আল্লাহ যা হতে নিষেধ করেছেন সে তার সাথে জড়িত । তার সে অবস্থায় মৃত্যু হলে অমঙ্গলজনক মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । এছাড়া কিয়ামত দিবসে তাকে অমঙ্গলজনক পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে । এর প্রমাণ তিন নম্বরে বর্ণিত হাদীস , যা পড়লে সহজেই বঝা সম্ভব ।
১২. বিদ’আতীর উপর দুনিয়াতে বেইজ্জতী আর আখেরাতে আল্লাহর ক্রোধ চাপিয়ে দেয়া হবে : (আখেরাতেও বেইজ্জতী হতে হেব তার প্রমাণ তিন নম্বরে বর্ণিত হাদীস) আল্লাহ তা’আলা বলেন : "অবশ্যই যারা গাভীর বাচ্চাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দুনিয়াতেই ক্রোধ ও লাঞ্ছনা এসে পড়বে । মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে থাকি” (সূরা আরাফ:১৫২) ।
সামেরীর প্ররোচনায় গাভীর বাচ্চা দ্বারা তারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল এমনকি তারা তার ইবাদাতও করেছিল । আল্লাহ তা’আলা আয়াতের শেষে বলেছেন : "মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে থাকি এটি ব্যাপকভিত্তিক কথা । এর সাথে বিদ’আতেরও সাদৃশ্যতা আছে । কারণ সকল প্রকার বিদ’আতও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপের শামিল । যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :
"নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ বিনা জ্ঞানে হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব রিযিক দিয়েছিলেন , সেগুলোকে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে হারাম করে দিয়েছে । নিশ্চয় তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি” (সূরা আন’আম : ১৪০)।
অতএব আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে যে ব্যক্তিই বিদ’আত সৃষ্টি করবে তাকেই তার বিদ’আতের কারণে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে । তাবেঈ’দের যুগে বাস্তবে বিদ’আতীদের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছিল । তাদেরকে তাদের বিদ’আত নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে ।
১৩. সুন্নাতের বিরোধীতা করার কারণে বিদ’আতী নিজেকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করে : সুফিয়ান ইবনু ওয়াইনাহ বলেন : আমি ইমাম মালেক (রহঃ) কে যে ব্যক্তি মদীনার মীকাতে পৌঁছার পূর্বেই ইহরাম বাঁধলো তার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম । তিনি উত্তরে বললেন : সে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচারণকারী । তার উপর দুনিয়াতে ফিতনার তার আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তির আশঙ্কা করছি । তুমি কি আল্লাহ তায়ালার বাণী শুননি ।
"যারা তাঁর নির্দেশের বিরোধীতা করবে তারা যেন সতর্ক হয় তাদেরকে ফিতনা পেয়ে যাওয়া বা তাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি গ্রাস করা থেকে” (সূরা আন-নূর : ৬৩ ।
১৪. বিদ’আতের অন্যতম ভয়াবহতা কারণ এই যে , সহীহ সুন্নাহ , তার ধারক – বাহক ও তার উপর আমলকারীকে বিদ’আতী ঘৃণা করবে এবং তাকে মন্দ জানবে ।
১৫. বিদ’আতী নিজেকে শরী’আতের মধ্যে কিছু সংযোজনকরী হিসাবে প্রকাশ করে : অথচ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে তাঁর বান্দাদের জন্য পূর্ণ করে দিয়েছেন । "আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামাতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসাবে পছন্দ করলাম ।” সূরা মায়েদা /৩
১৬. বিদ’আত হচ্ছে জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলা : শরী’আতের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে কিছু বানিয়ে বললে তা যে কতই ভয়ানক সেটি অনুধাবন করা যায় আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবী (সাঃ) কে সম্বোধন করে বলা নিম্নোক্ত কঠোর ভাষার আয়াতগুলিতে :
"সে যদি আমার নামে কোন কিছু রচনা করতো , তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম , অতঃপর তার গ্রীবা কেটে দিতাম তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতো না” (সূরা আল-হাক্কাহ : ৪৪-৪৭) ।
রাসূল (সাঃ) কেও নিজের পক্ষ হতে কিছু বনিয়ে বলার অনুমতি দেয়া হয়নি , এ আয়াত তার জাজ্বল্য প্রমাণ । তেমন তিনি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলতেন না । আল্লাহ তা’আলা বলেন :
"আর তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না , যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহী নাযিল হয়” (সূরা আন-নাজম:৩-৫) ।
১৭. বিদ’আতীর জ্ঞান উলট-পালট হয়ে তার নিকট সব কিছুই গোলমেলে হয়ে যায় । ফলে সে বিদ’আতকে সুন্নাত আর সুন্নাতকে বিদ’আত মনে করে ।
অতএব বিদ’আতের ভয়াবহতা হতে রক্ষা পেতে হলে , আমাদের মাঝে প্রচলিত বিদ’আতগুলো হতে সতর্ক হয়ে সেগুলোকে পরিত্যাগ করে সহীহ সুন্নাহ মাফিক আমল করা ছাড়া আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই । আসুন আমরা দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসগুলো জেনে সেগুলো পরিত্যাগ করি এবং সহীহ হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমাদের জীবন গড়ি ।
বিদ’আতের সাথে জড়িত হওয়ার কারণগুলো নিম্নরুপ : ১. কুরআন , সুন্নাহ ও আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা । ২. অতীতের সত্যানুসারী ব্যক্তিগণের মত ও পথের অনুসরণ না করা । ৩. প্রবৃত্তি বা মনোবৃত্তির অনুসরণ করা । ৪. সন্দেহমূলক বস্তুর সাথে জড়িত থাকা । ৫. শুধুমাত্র স্বীয় বুদ্ধির উপর নির্ভর করা । ৬. বড় বড় আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে তার অন্ধ অনুসরণ করা , যা গোঁড়ামির দিকে নিয়ে যায় । আর তখনই সে কুরআন ও সুন্নাতের দলীলগুলোকে অমান্য করে । ৭. মন্দ লোকদের সংস্পর্শে থাকা ও চলা ।
পাঠক ভাই ও বোনেরা ! যে ব্যক্তি উপরোক্ত আলোচনা বুঝতে সক্ষম হবেন , আমার মনে হয় সে ব্যক্তি নিজেকে বিদ’আত ও তার ভয়াবহত হতে রক্ষার্থে এখন থেকে যাচাই – বাছাই করে পথ চলবেন । যাতে করে অসতর্কতা বশতঃ বিদ’আতের মধ্যে জড়িয়ে না যান । যে আমলই আমরা করি না কেন তা যাচাই – বাছাই করেই করা উচিত । কারণ হতে পারে বহু আমল আমার , আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে যেগুলো দুর্বল বা বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভরশীল ।
রসূল (সাঃ) এর নিম্নোক্ত বাণী কোন ব্যক্তির ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না : "আমার এ নির্দেশের মাঝে যে ব্যক্তি এমন কিছু নবাবিষ্কার করবে যা তার অন্তর্ভুক্ত ছিল না , তা পরিত্যজ্য ।” (বুখারী হা/২৬৯৭ ; মুসলিম হা/৩২৪২ ; আবু দাউদ হা/৩৯৯০ ; ইবনু মাজাহ হা/১৪)
তিনি আরও বলেন : "যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার উপর আমার কোন নির্দেশ নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য ।” মুত্তাফাকুন আলাইহি হা/৩২৪৩ ।
অতএব আমরা কার স্বার্থ রক্ষার্তে তথাকথিত হুজুরদের ধোঁকায় পড়ে নবী (সাঃ) হতে সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসগুলো ছেড়ে দিয়ে নিজেদেরকে বিপদগামী করব ?
আসুন ! আমরা রাসূল (সাঃ) এ শাফায়াত প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নিজেদেরকে তাঁর সহীহ সুন্নাহমুখী করি । আর অনুধাবন করি নিম্নোক্ত হাদীসটি । কারণ একমাত্র তাঁর সহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিষয়টি যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ এটি তারই প্রমাণ বহন করছে : রাসূল (সাঃ) বলেছেন : "সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার আত্মা যদি মূসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার আর কোন সুযোগ ছিল না ।” মুসনাদ ইমাম আহমাদ হা/১৪৬২৩ ।
অতএব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সার্বিক কল্যাণ একমাত্র রাসূল (সাঃ) এর আদর্শের মধ্যেই আমাদেরকে খুঁজে নিতে হবে ।
আসুন ! আমরা জাল ও য’ঈফ হাদীসগুলো জানি এবং তথাকথিত হুজুরদের জাল ও য’ঈফ হাদীস নির্ভর ফতোয়া ও আক্বীদাহ হতে নিজেদেরকে মুক্ত করি । আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ও তাঁর নবীর যথাযথ অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন । আমীন
|