Tuesday, 2024-04-30, 7:50 AM
Welcome Guest | Sign Up | Login

My site

Site menu
Calendar
«  April 2024  »
SuMoTuWeThFrSa
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930
Site friends
  • Create a free website
  • Online Desktop
  • Free Online Games
  • Video Tutorials
  • All HTML Tags
  • Browser Kits
  • Statistics

    Total online: 1
    Guests: 1
    Users: 0

    গীবত কী?

    মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন,
    ‘আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।, (সূরা হুজুরাত:১২)

    সুস্থ, স্বাধীন কোনো বিবেকবান মানুষই জ্ঞান অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মৃত মানুষ তো দূরের কথা, যে পশু জীবিত থাকলে হালাল সেই পশু মৃত হলে তার গোশতও ভক্ষণ করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গীবতের মতো জঘন্য ফ... েতনায় নিমজ্জিত হয়।

    গীবত কী?
    গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষারোপ করা, অনুপস্থিত থাকা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।
    পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনো ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে।’ (মু’জামুল ওয়াসিত) গীবতের সবচেয়ে উত্তম ও বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিম্মোক্ত হাদিস থেকে পেতে পারি।

    সাহাবি আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (মুসলিম)
    সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোনো ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলা গীবত যা সে অপছন্দ করে।

    গীবতের পরিণাম
    গীবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

    ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ-১)
    কেউ গীবত শুনলে তার অনুপস্থিত ভাইয়ের পক্ষ থেকে তা প্রতিরোধ করবে সাধ্যমতো। আর যদি প্রতিরোধের শক্তি না থাকে তবে তা শ্রবণ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ। হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রাঃ বলেন, ‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ।’
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরীল আঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (মাজহারি)

    আবু সায়িদ ও জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’

    সুতরাং এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হল যে, গীবত একটি জঘন্য পাপাচার। এ থেকে সবাইকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকতে হবে।

    যাদের দোষ বর্ণনা করা যায়

    গীবত নিঃসন্দেহে হারাম। তারপরও যাদের দোষ বর্ণনা করা যায় তা হচ্ছে¬
    • কোনো অত্যাচারীর অত্যাচারের কাহিনী প্রতিকারের আশায় বর্ণনা করা।
    • সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার পিতা ও স্বামীর কাছে অভিযোগ করা।
    • ফতোয়া গ্রহণ করার জন্য ঘটনার বিবরণ দেয়া ও – প্রয়োজন ও উপযোগিতার কারণে কারো দোষ বর্ণনা করা জরুরি।
    • আবার যাদের স্বভাব গীবত করা তাদের সম্পর্কে অন্যদের সাবধান করার জন্য তার দোষ বর্ণনা করা জায়েজ।

    যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা এক ব্যক্তি (মাখরামা ইবনে নওফেল) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি বললেন, তাকে আসার অনুমতি দাও, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। অতঃপর তিনি তার সাথে প্রশস্ত চেহারায় তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি চলে গেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন, অতঃপর আপনিই প্রশস্ত চেহারায় তার প্রতি তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি কখনো আমাকে অশ্লীলভাষী পেয়েছ ? নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালার কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক নিকৃষ্ট সেই লোক হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করেছে। (বুখারি, মুসলিম)

    গীবত করার কারণ
    মানুষ সব সময় নিজেকে বড় করে দেখে, এই আমিত্বের আরেক নাম আত্মপূজা। এটা শুরু হয়ে গেলে আত্মপ্রীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন তার আত্মত্যাগের মতো মহৎ বৈশিষ্ট্য দূরিভূত হতে থাকে। ফলে এ স্থানে দানা বাঁধে হিংসা-বিদ্বেষ। আবার হিংসা-বিদ্বেষ থেকেই অপরের প্রতি কুধারণার সৃষ্টি হবে, যা মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে। সুতরাং আত্মপূজা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারণাই মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে।

    বেঁচে থাকার উপায়
    গীবত থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ থেকে বাঁচার প্রথম উপায় হচ্ছে অপরের কল্যাণ কামনা করা। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা করা।’

    দ্বিতীয়ত, আত্মত্যাগ অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয়া। যেমন আল্লাহ সূরা হাশরের ৯ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন,

    ‘তারা নিজের ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে।’

    তৃতীয়ত, অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া।

    চতুর্থত, মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।

    শেষ কথা আমাদের সব সময় আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে তিনি যেন অনুগ্রহ করে গীবতের মতো জঘন্য সামাজিক ব্যাধিতে আমাদের নিমজ্জিত হতে না দেন। এ ক্ষেত্রে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সর্বাগ্রে। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন ভোরে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তখন শরীরের সব অঙ্গ জিহ্বার কাছে আরজ করে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহর নাফরমানি কাজে পরিচালিত করো না। কেননা, তুমি যদি ঠিক থাক, তবে আমরা সঠিক পথে থাকব। কিন্তু যদি তুমি বাঁকা পথে চলো, তবে আমরাও বাঁকা হয়ে যাবো। (তিরমিজি)

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি