Tuesday, 2024-04-30, 10:41 AM Welcome Guest | Sign Up | Login |
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
My site | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
ফেরাউন কন্যার এক পরিচারিকার। এ কাহিনীহে নাম না জানা নারী! ধন্য তোমার কুরবানী !! (পর্ব -১)এ কাহিনী ফেরাউন কন্যার এক পরিচারিকার। কেশবিন্যাসকারীনীর ইতিহাস আমাদের জন্যে তাঁর নামটা সংরক্ষন করে রাখে নি, তবে তাঁর কর্ম সংরক্ষন করে রেখেছে। তাঁর ত্যাগ সংরক্ষন করে রেখেছে। তাঁর কুরবানী সংরক্ষন করে রেখেছে। সে ত্যাগের কাহিনীই এখন আপনাদের নিবেদন করছি। তিনি ছিলেন এক সতী মহিলা। তিনি এবং তাঁর স্বামী ফেরাউনের আশ্রয়ে থাকতেন। তাঁর স্বামী ছিলো ফেরাউনের প্রিয়ভাজন। নিকটজন। ফেরাউনের আশ্রয়ে থাকলেও তাঁরা ঈমান কবুল করে ধন্য হয়েছিলেন গোপনে গোপনে। হঠাৎ কী উপায়ে যেনো ফেরাউন মহিলাটির স্বামীর ঈমান আনার কথাটা জেনে ফেলে। আর যায় কোথায়। সাথে সাথে ডেকে এনে তাঁকে হত্যার নির্দেশ দিলো ফেরাউন। কিন্তু মহিলার বিষয়টি গোপনই থাকে। ফেরাউনের মহলেতার মেয়েদের কেশবিন্যাস করে করে তারঁ সময় চলছিলো। বিনিময়ে যা পেতেন তা দিয়ে পাঁচ সন্তানের ভরণ-পোষন চালাতেন বেশ কষ্টে। বড় ভালবাসতেন তিনি তাঁর সন্তানদেরকে। নিত্যদিনের মতো একদিন তিনি ফেরাউন তনয়ার কেশ বিন্যাশ করছিলেন। অসতর্কতার মুহুর্তে হঠাৎ তাঁর হাত থেকে চিরুনিটা পড়ে গেলো। তখন হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত তাঁর ঈমান কথা বলে উঠলো! তার মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো- ‘বিসমিল্লাহ’! তখন ফেরাউন তনয়া বিশ্মিত হয়ে বললো- ‘এই আল্লাহর নামে মানে আমার আব্বার নামে তো? !’ তখন কেশবিন্যাশকারিনী মহিলাটির ঈমানী গায়রত আরো জোরে কথা বলে উঠলো! ঈমানী জযবাকে কতোক্ষন আর চেপে রাখা যায়? পারলেন না তিনি ঈমানকে লুকিয়ে রাখতে! তোজোদ্দীপ্ত কন্ঠে বলে উঠলেন- ‘অসম্ভব!! বরং আল্লাহর নামে! যিনি আমার রব!! তোমার রব! তোমার আব্বারও রব!’ তখন ফেরাউন তনয়া বেশ বিস্মিত হলো এই ভেবে যে, তার আব্বা ছাড়া আর কে প্রভু হতে পারেন?? কার ইবাদত করা হতে পারে??? ফেরাউন তনয়ার পেটে কথাটা একেবারেই হজম হলোনা। বিষয়টা সে তার বাবাকে জানিয়ে দিলো। ফেরাউন বিশ্মিত হলো। ভাবলো, তাহলে তার প্রাসাদে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদতও চলে!! এরপরই শুরু হলো ফেরাউনী তান্ডব। সর্বগ্রাসী তান্ডব। কাল বিলম্ব না করে মহিলাকে ডেকে পাঠানো হলো। আসতেই ফেরাউন জিজ্ঞাসা করলো- ‘তোমার রব কে?’ মহিলাটি জবাবে বললেন- আমার এবং আপনার রব একজন! তিনি হলেন- আল্লাহ!’ সাথে সাথে ফেরাউন তাকে বন্দি করার হুকুম করলো। তাকে তার বিশ্বাস থেকে সরে আসার নির্দেশ দিলো। স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য চলতে লাগলো অমানবিক বেত্রাঘাত!!। কিন্তু ফেরাউন যা ভেবেছিলো তা হলো না। মহিলা ঈমান তরক করলেন না। ফেরাউন তখন পিতলের একটা ইয়া বড় পাতিল আনলো। তারপর তেল ভরে গরম করলো। তেল গরম করলো। তেল গরম হতে হতে টগবগ করতে লাগলো। এরপর সে মহিলাকে পাতিলের কাছে আনার নির্দেশ দিলো। মহিলা এসে এ সব আয়োজন দেখে বুঝতে পারলেন তার আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। কিন্তু ঘাবড়ালেন না। ঈমানের পথ থেকে সরে এলেন না। ভাবলেন-জীবন তো একটাই ! ঈমান আনার কারনে এই এক জীবনের সেতু পেরিয়ে সময়ের পূর্বেই যদি ‘দীদারে- মাওলা’ নসীব হয়, তাহলে কেন আমি ‘লাব্বাইক বলবো না?!! ফেরাউন জানতো- মহিলার কাছে সবচে প্রিয় হলো তাঁর পাঁচ এতিম সন্তান। ওদের ভরন পোষনের ব্যবস্থা করে সে তার প্রাসাদে কাজ করেই। ফেরাউন চাইলো- মহিলাকে আঘাত করতে, শক্ত আঘাত! ফেরাউনী আঘাত!! তাই সে তাঁর পাঁচ সন্তানকে তার সামনে হাজির করলো। ধরে আনার সময় ওরা বুঝতে পারছিলোনা কোথায় তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কেনো? কিন্তু যখন মা’কে দেখলো শেকলবাঁধা, ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁর কোলে!! কাঁদতে কাঁদতে মাও তাদেরকে আকড়ে ধরলেন! মুখে মুখে মুখ মিলালেন! চোখে চোখে চোখ ঘষলেন!! এতিম মানিকদের শরীরের ঘ্রাণ নিলেন!! স্নেহাশ্রুর টপ টপ ফোঁটা ওদের উপরে ঢালতে লাগলেন। একেবারে ছোট্ট মানিকটিকে তিনি বুকে তুলে নিলেন! সোহাগভরে দুধ খাওয়ালেন!! ফেরাউন মাতৃমমতার এ দৃশ্য দেখে মনে মনে হাসলো। শুরু করলো নিষ্ঠুরতার খেলা। বড় ছেলেটিকে টগবগে তেলে ফেলে হত্যার নির্দেশ দিলো! সৈন্যরা সাথে সাথে তার হুকুম তামিল করতে ওকে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো সেই গরম তেলের দিকে!!! আহ!! তখন ছেলেটার সে কি কান্না !!! মা ! মা! বেল ও চিৎকার করছিলো। সৈন্যদের কাছে মিনতি করছিলো। ফেরাউনের কাছে অনুনয় বিনয় করছিলো ! কান্নার গমকে গমকে হাত-পা ছুঁড়ছিলো। করুন কন্ঠে যাকছিলো ছোট ভাইদের নাম ধরে ধরে। এদিকে পাষন্ড সৈন্যরা ওর হাতে আঘাত করছিলো। মুখে থাপ্পর মারছিলো। মা করুন চোখে তাকিয়ে রইলো প্রিয় সন্তানের দিকে। অশ্রুঝরা দৃষ্টিতে!! বিদায় মাখা চাহুনিতে!!! কিছুক্ষনের ভিতরেই বালকটিকে নিক্ষেপ করা হলো ফুটন্ত টগবগে তেলে!!!!!! মা এ অসহনীয় দৃশ্য দেখলেন দম বন্ধ করে!! আখিনীরে বুক ভাসিয়ে!!! ভাইয়েরা সহোদরের এমন করুন অবস্থা দেখে মুখ ঢাকলো- ছোট ছোট কোমল হাতে! ওদের আর্ত চিৎকার থেকে যেন ভেসে আসছিলো- ‘তোমরা কেন আমাদের ভাইকে মেরে ফেললে?? এখন কে আমাদের আদর করবে??? তোমরা খারাপ !! তোমরা নষ্ট !! তোমরা অমানুষ !! মুহুর্তেই ছোট্ট দেহের রেশম কোমল হাড্ডিগুলো গলে গেলো!! সাদা হয়ে উপরে ভেসে উঠলো। ফেরাউন এরপর তাকালো মহিলার দিকে!! কুটিল চোখে !!! নিষ্ঠুর পাশবিকতায় নৃত্য করছিলো তার চোখের তারা!!! ফেরাউন মহিলাকে আবার ঈমান তরক করতে বললো। মহিলাও আবার অস্বীকার করলেন। ফেরাউন আবারো ক্ষুব্ধ হলেন। দ্বিতীয় সন্তানটিকে তেলে নিক্ষেপ করার হুকুম দিল। তখন সৈন্যরা মায়ের কাছ থেকে তাকেও আগের মতো টেনে নিয়ে গেলো। একটু পর সেও নিক্ষিপ্ত হলো তার ভাইয়ের মতো!!! মা এক সন্তানের চলে যাওয়া দেখেছেন একটু আগে, এখন দেখছেন আরেকজনের চলে যাওয়া!!! অশ্রু প্লাবিত চোখে !!! হ্যা, একটু পর তার হাড্ডিও গলে গেলো। সাদা হয়ে উপরে ভেসে উঠলো!! না ! মা এখনো অবিচল ! ঈমানও তার অটল!! তার রব এর সাথে মিলন স্বপ্নে তবুও তিনি চিন্তা-বিভোর!! এরপর এলো তৃতীয়জনের পালা। একই নিষ্ঠুরতায়! না ! তবুও মা টললেন না! ঈমান থেকে ফিরে গেলেন না ফেরাউনের প্রভুত্বে। প্রভূত্ব তো আল্লাহর ! এ বিশ্বাস থেকে টলে গেলে যে জাহান্নামের তপ্ত আগুন হবে সব সময়ের ঠিকানা! * কাল দ্বিতীয় পর্ব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। হে নাম না জানা নারী! ধন্য তোমার কুরবানী !! (পর্ব -২) মা’র অবিচলতা দেখে ফেরাউনের মাথায় রক্ত ঘোরপাক খেতে লাগলো। এলো এবার চতুর্থ সন্তানের পালা। একই নিষ্ঠুরতায় চালানো হল একই তান্ডবলীলা! ও ছিল বেশ ছোট! মায়ের আঁচল ধরে সে কি কান্না! সে কি চীৎকার! পাহাড় টলা চীৎকার! সৈন্যরা যখন টেনে ওকে মায়ের আঁচলমুক্ত করলো তখন ও ঝাপিয়ে পড়লো মায়ের পায়ে! আঁকড়ে ধরলো মাতৃ পদযুগল! শিশুময় অশ্রুতে ভেসে গেলো যুগলপদ! তবু ফেরাউনের নিষ্ঠুর হৃদয় সমুদ্রে দয়া মায়ার বাতাস বইলো না! তরঙ্গ তো উঠলোই না। মা ওকে আবার কোলে নিতে চাইলেন। চুমু দিয়ে শেষ বিদায় দিতে চাইলেন! বাঁধ সাধলো নিষ্ঠুর সৈন্যরা! ছোট শিশু! মুখে ঠিকমত কথাও ফোটেনি। শোনা যাচ্ছিলো শুধু অবোধগম্য আওয়াজের কাতর মিনতি!! না বোঝা ভাষায় কী বলছিলো ও?? ও কি বলছিলো- ‘মা ! আমি মরতে চাই না! আমি বাঁচতে চাই! আমি চলে গেলে আমার ছোট ভাইটিকে রোজ রোজ কে আদর করবে?? চুমু খাবে? সত্যি কি ফেরাউন আমাকে এই গরম তেলে পুড়ে মারবে?? কেমনে সইবো আমি আগুনের তাপ? কয়েক মুহুর্ত পরেই ভেসে উঠলো ছোট্ট শিশুটির সাদা সাদা কোমল হাড্ডি!! একে একে চারটি মানিকের নৃশংস হত্যা দেখলেন স্নেহময়ী মা- তাকিয়ে তাকিয়ে। নীল বেদনায় পাথর হয়ে! তাঁর দু’চোখে বয়ে চলেছে শোকাশ্রুর অবাধ্য বন্যা !!! আহ !! তাঁর সন্তানদের চিরবিচ্ছেদ বেদনা কেমনে সইবেন তিনি?? বিশেষ করে এইমাত্র নিষ্ঠুরতার বলি হওয়া ছোট্ট মানিকের বেদনা?? যাকে কতো আদর দিয়েছেন তিনি! দিয়েছেন কতো সোহাগমাখা চুমু!! ও যখন রাত্রিতে ঘুমোচ্ছে না, তাকেও তখণ নির্ঘুম রাত কাটাতে হতো। ও যখন কাঁদতো তিনিও কাঁদতেন। রাতের পর রাত ও তাঁর কোল জড়িয়ে... বুক জড়িয়ে ঘুমিয়েছে!! তাঁর চুল নিয়ে খেলা করেছে!! মাঝে মধ্যে তিনি নিজেই হয়েছেন ওর খেলার সঙ্গিনী। ও আজ নেই। ও আজ নিষ্ঠুরতার শিকার। হায় ! এমন বেদনা যে সইবার নয়!! মহিলাটি বার বার চোখে আঁচলচাপা দিচ্ছিলেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্ঠা করে যাচ্ছিলেন। এরই মাঝে নিষ্ঠুর সৈন্যরা তাঁর দিকে আবার এগিয়ে এলো। যেনো একদল দানব এগিয়ে আসছে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে!!! |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
Copyright MyCorp © 2024 |